বুধবার ১২ নভেম্বার ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
আন্তর্জাতিক

যেখানে প্রতিটি দিন শুরু হয় একটাই প্রশ্ন দিয়ে—আজ কি খাবার জুটবে?

মেহমেদ মেরাজ ০২ আগষ্ট ২০২৫ ০৪:০১ পি.এম

সংগৃহিত সংগৃহিত

গাজা উপত্যকার এক তাবুতে প্রতিদিন ঘুম ভাঙে আবির ও ফাদি সোভ দম্পতির। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ভাবেন—আজ কীভাবে খাবার জোগাড় করবেন নিজেদের ও ছোট ছয় সন্তানের জন্য?

তাদের হাতে মাত্র তিনটি উপায়: হয়তো কোনো দাতব্য রান্নাঘর খোলা থাকবে; হয়তো ভিড় ঠেলে সাহায্যের ট্রাক থেকে কিছু আটা পাওয়া যাবে; না হলে শেষ ভরসা—ভিক্ষা। তিনটিতেই ব্যর্থ হলে, সেদিন আর কিছু খাওয়া হয় না। এখন এমনটাই হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন।

গাজা শহরের পাশের একটি শরণার্থী ক্যাম্পে বাস করে সোভ পরিবার, যারা বহুবার স্থানচ্যুত হয়েছে। তাদের মতো হাজারো পরিবার আজ ক্ষুধা, গরম আর অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়ছে।

২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মানবিক সহায়তায় বিধিনিষেধ, অবরোধ এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, বর্তমানে “সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি” সেখানে বাস্তবে ঘটছে।

ইসরায়েল মার্চে প্রায় আড়াই মাস খাদ্য ও সাহায্য বন্ধ রেখেছিল, হামাসের কাছে জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে। মে মাসে সহায়তা কিছুটা চালু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।

মিষ্টি পানির অভাবে আবির প্রতিদিন সাগর থেকে পানি আনেন। তাতে সন্তানদের গোসল করান ধাতব বেসিনে দাঁড় করিয়ে। লবণজলে ৯ মাস বয়সী হালার চোখ জ্বলে, কাঁদে—বাকিরা মুখ বুজে সহ্য করে।

আগের দিনের কিছু না থাকলে আবির বের হন ভিক্ষা করতে। কখনও কেউ এক বাটি পাতলা ডাল দেন, কখনও কিছুই মেলে না। ভাগ্য ভালো হলে ডাল গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে ছোট সন্তানদের খাওয়ান।

ফাদি সকাল থেকে অপেক্ষা করেন কাছের রান্নাঘরে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় খালি হাতে ফিরতে হয়। একসময় তিনি ট্রাক থেকে খাবার সংগ্রহে যেতেন, কিন্তু সম্প্রতি সেখানে গুলি লেগে তার পায়ে আঘাত হয়। এখন আর যেতে পারেন না।

বড় তিন সন্তান—ইউসুফ, মোহাম্মদ ও মালাক—জেরিকেন নিয়ে বের হয় মিষ্টি পানি আনতে। ভারে কাঁধে, পিঠে বা মাটিতে টেনে আনে তারা সেই বোঝা।

আবির বা তার ছেলে ইউসুফ সাহায্যের ট্রাকের আশায় যান জিকিম এলাকায়। ভিড়ে পিছিয়ে পড়েন, তবে কেউ কেউ দয়া করে কিছু আটা দিয়ে দেন। এইভাবে অল্প যা মেলে, তা দিয়েই দিন চলে।

দুপুরে গরমে শিশুদের ঘুমিয়ে রাখতে চান তারা—তাতে কম শক্তি ক্ষয় হয়, কম খিদে পায়।

বিকেলে ছেলেমেয়েরা ঘুরে বেড়ায় ধ্বংসস্তূপ আর আবর্জনায়—খুঁজে ফেরে কাঠ, কাগজ বা যেকোনো কিছু যা দিয়ে আগুন জ্বালানো যায়। পুরোনো এক পাত্র খুঁজে পেয়েছিল একদিন—এটাই এখন তাদের রান্নার হাঁড়ি।

সব মিলিয়ে, যদি খাবার, পানি ও জ্বালানি তিনটিই মেলে, তবে পাতলা ডালের ঝোল রান্না হয়। না হলে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই।

“আমি খুবই ক্লান্ত। আর পারছি না। যদি যুদ্ধ এভাবে চলতেই থাকে… নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাও ভাবছি,” বলেন আবির।

এই পরিবারটির জীবন যেন গোটা গাজার প্রতিচ্ছবি। যেখানে প্রতিটি দিন শুরু হয় একটাই প্রশ্ন দিয়ে—আজ কি খাবার জুটবে?


এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

‘মহান মিত্র’ কাতারের ইস্যুতে ইসরাইলকে সতর্ক থাকতে বললেন ট্রাম্প

news image

বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী

news image

ইউক্রেনে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার, ইউরোপের নিন্দা

news image

‘স্বৈরশাসক’ ট্রাম্পের অপসারণের দাবিতে উত্তাল ওয়াশিংটন

news image

একই টেবিলে শি জিনপিং-কিম-পুতিন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ট্রাম্পের

news image

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯০০

news image

মুসলিম ঐক্যের ডাক ইরানি প্রেসিডেন্টের

news image

যেখানে প্রতিটি দিন শুরু হয় একটাই প্রশ্ন দিয়ে—আজ কি খাবার জুটবে?

news image

বাংলাদেশি পণ্যে ভারতের চেয়ে কম শুল্কের ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের

news image

নিউইয়র্কে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পশ্চিমা ১৫ দেশের আহ্বান

news image

ইসরায়েল চার শর্ত না মানলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য

news image

জাতিসংঘের ত্রাণবাহী গাড়িবহর গাজায় প্রবেশ করতে মানবিক করিডর খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল!

news image

গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েকদিন ধরে অভুক্ত: বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি

news image

ইসরায়েলি আগ্রাসন নিরুপায় মায়ের চোখের সামনেই মরছে ক্ষুধার্ত শিশু

news image

ইইউ-মেক্সিকোর ওপর ৩০% শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের